বাংলা প্রেমের গল্প

 

বাংলা প্রেমের গল্প

একটু চমকে গিয়েছিলাে মালা, স্থির হয়ে অবিন্যস্ত শাড়িটা সামলাতে সামলাতে সে-ও উঠে বসলাে। 
এখন মাঝরাত, জানালা-দরজায় কপাট, তবে নিঃশব্দ থাকলে বন্ধ দরজা-জানালার ফাক গলে নানারকম পরিচিত-অপরিচিত শব্দ কানে এসে পৌছয়। 
খােলা চুলে খোঁপা বেঁধে নিয়ে হাঁটুতে মুখ ঠেকালাে মালা, মৃদু হাসলাে সে বাইরে যাবে, এই রাতে। 
রতনের নানা বাতিক, সে জানে। 
তবে রতন এখন স্থির – যাবো।
 






কাল তাে চলে যাচ্ছি-সে বললো, আজ জ্যোৎস্না, চলােএখন ঘুরে আসি, বেশিদূর যাবাে না, নদী পাড় পর্যন্ত। হাঁটুতে মুখ ঠেকিয়ে রতনের দিকে তাকিয়ে সামান্য ক্ষণ ভাবলাে মালা, তার আপত্তি নেই, সে বললাে-চলাে, আমি, রাজি। আপত্তি থাকলেও শুনতাম না-রতন বলে এবং বিছানা ছেড়ে নামে। বেশ অনেকটা জায়গা নিয়ে একান্নবর্তী পরিবারের ঘরবাড়ি। প্রায় সব লাগােয়া ঘর, কিছু আছে খুব অল্প দুরে-দুরে। রতন খুব সন্তর্পণে দরজার খিল খােলে, এই মাঝরাতে মৃদু কোনাে আওয়াজও জোরালো শােনাবে। দরজা খুঁলে মালাকে হাত ধরে বাইরে এনে দরজা সে আলগােছে ভেজিয়ে দেয়। সারবাঁধা পরপর কয়েকটি ঘর। 
এপাশে বাড়ির অল্পবয়সীরা, তাই কিছুটা স্বস্তি। মুরুব্বীরা একটু দূরে-দূরে ওদিকে থাকতে ভালােবাসে।

রতন দরজা ভেজিয়ে প্রথমেই এদিকে ওদিক দেখে নিলাে, দাওয়ায় ঘুমিয়ে ছিলাে দুটো কুকুর, তারা এই মৃদু শব্দেই উঠে দাঁড়িয়েছিলাে, তবে তারা এই এক সপ্তাহে এ-দু’জনকে চিনে ফেলেছে, সামান্য লেজ নেড়ে তারা তাই আবার মাটিতে শরীর মুখ ঢাকলাে। 
রতন হাত ধরলাে মালার-দেখেছাে, বলিনি আজ জ্যোৎস্না, চলাে-আজ পাগল হয়ে যাবাে। 
মৃদু হাসে মালা ‘বাকি নেই…কিন্তু একটা ব্যাপার, ধরাে যদি জীন বা পরী ভর করে? ‘তবে ব্যাপারটা আগে থেকেই ঠিক করে নিচ্ছ, তুমি পরি আমি জীন রতন বললাে, বলে তারা এগােলাে। মালার মৃদু হাসির শব্দই বেশ বেজে ছিলাে, তারা টের পায়নি। 
তপনের ঘর পেরােনাের আগে সে ঘরের ভেতর থেকে তপন বলে,  ‘কে যায়?’ একটু চমকেছিলাে বটে রতন, তবে মুহূর্তের মধ্যে সে সামলে নিলাে,চুপ শালা, আমি যাই। তুই চুড়ি পরা ধরলি কবে?

তপনের গলার সঙ্গে তার বউয়ের মৃদু হাসিও ভেসে আসে। রতনের রিফ্লেক্স কম নয়, সে বলে’তবে ধরে নে, চুড়ি যে পরে সেও আছে সঙ্গে। রতনের পাশে দাঁড়িয়ে মালা শাড়ির আঁচলে হাসি সামলায়।
তা রতনবাবু, যাওয়াটা হচ্ছে কাথায় এতাে রাতে?
বাইরে।
সে তাে বুঝতেই পারছি। বাইরে কোথায়?
নদী পাড় পর্যন্ত।
নদী! দড়ি-কলসি নিয়েছিস সঙ্গে?
না না, তা কেন রতন সবেগে মাথা নেড়ে উত্তর দিতে দেরি করলাে না-বরং আমি ভাবছি নদীপাড়ে মালাকে দাঁড় করিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে আমি বলবাে,তুমি হও গভীর গাঙ আমি ডুইব্যা মরি। তপন সমবয়সী চাচাতাে ভাই। ওর সঙ্গে একটু ইয়ার্কি খুব সহজেই চলে।তপন বললাে-বেশ।
তােরা যাবি?


তপনের ঘরে আড়মােড়া ভেঙে হাই তােলার মৃদু শব্দ হয়, সে বলে-নারে, পােষাবে না। এসব ব্যাপারস্যাপার নতুনদেরই মানায়, আমাদের প্রায় দুবছর হতে চললাে তবে বেশিদুর যাসনে। যাবাে না-বলে মালার হাত ধরে বাকি ঘরগুলাে পেরােয় রতন। আর কেউ জেগে নেই। ওদিকে একবার কাসির শব্দ শােনা গিয়েছিলাে, তবে সে বােধহয় ঘুমের ভেতর। তারা নির্বিঘ্নে ঘরগুলাে পেরিয়ে দাওয়ায় নামলাে। আজ জোর জ্যোস্না। চারিদিক সদ্য ধােয়া আয়নার মতাে কিছুটা ফাঁপা কিছুটা পরিস্কার। বাতাসও আছে খুব। 

সে বাতাসের রােখ টের পাওয়া যায় না এই প্রায় আবদ্ধ জায়গায় দাঁড়িয়ে, কিন্তু সে একটানা বইছে। বাড়ির বাইরে সামনে দক্ষিণের বাগানে তার উপস্থিতি তারা দাওয়ায় নেমে চারপাসে আরেক বার তাকায়। বাড়ির সীমানা পেরােনাের আগেই কুকুর দুটো উঠে দাঁড়ায়, তাদের পেছনে-পেছনে আসে মৃদু পায়। তা আসুক, সে কোনাে ব্যাপার নয়, বরং পাহারাদার রইল দু’জন। বাড়ির সীমানা পেরিয়ে এসে তারা গলা খুলে হাসে। দু’জন দুজনের দিকে ফিরে থামাে থামাে, কেউ জেগে উঠবে। তাদের চাপা হাসি ফুরােয় না, এগােতে এগােতে বারকয়েক পেছনে ফেরে, কেউ দেখলাে কি-না। 
দেখলে অসুবিধের কিছু নেই, তাদের নিছক কৌতূহল। বড়জোর মুরুব্বীদের মৃদু ধমক শুনতে হবে, কিংবা সমবয়সীদের খুচরাে ইয়ার্কি।

এই পুরাে এলাকায় ভয়ের কোনাে কারণ নেই। 
বড় শাস্ত গ্রাম, গণ্ডগােল পাকানাের মতাে সাহসী যে দু’চারজন, তারা এ-বাড়ির বাঁধা লােক। তাছাড়া নদীপাড় বাড়ি থেকে সামান্য সময়ের পথ। 
পথে আরাে দু’-চার ঘর পড়বে, সেসব ঘরে যারা থাকে তারা এ-বাড়িরই কামলা বা ঐ জাতীয় কিছু। 
তারা তাই হাত ধরাধরি করে নির্ভয়ে এগােয়। 
কুকুর দুটো মাটি শুকতে শুকতে পেছনে তাে আসছেই। ইট-বিছানাে আধ-পাকা রাস্তা কিছুদুর এগিয়ে অন্যদিকে ঘুরে গেছে। তারা সে রাস্তা ছেড়ে মেঠো পথে নামলাে। এখান থেকে নদী দেখা যায়, সে নদী বড় নয়, শাখা নদী। নদীর দক্ষিণে অল্প দূরে দক্ষিণ-পূবে বড় বাড়ির নিজস্ব বাগান বিশাল এলাকা জুড়ে।
সাফ-সুতরাে এলাকা-ভীতিপ্রদ কিছু উঠে আসবে না ও অঞ্চল থেকে। তারা দু’জন হাত ধরাধরি করে এগিয়ে দু’পাশের কামলা-মজুরদের দু-চার ঘর পেরিয়ে নদীর কাছে। এসে পৌছালাে। 
রতন এদিক-ওদিক দেখে নিয়ে মালার মুখ উঁচু করে ধরলো-এখনত বে তােমাকে একটু আদর করি। 

Comments

Popular posts from this blog

WWE Royal Rumble 2024: Becky Lynch And The 5 Women’s Favorites